হাওজা নিউজ বাংলা রিপোর্ট অনুযায়ী, আজ ৫ জুমাদাল উলা মহানবী ( সা:)- এর প্রথমা দৌহিত্রী , হযরত আলী (আ:) ও হযরত ফাতিমা যাহরার ( আ:) প্রথম ( জ্যৈষ্ঠ ) কন্যা সন্তান এবং হযরত ইমাম হাসান ও ইমাম হুসাইনের ( আ:) প্রথম বোন হযরত যয়নাব ( আ:) এর শুভ জন্মদিন উপলক্ষে সবাইকে জানাই আন্তরিক শুভেচ্ছা ও মুবারক বাদ ।
হযরত যয়নাব (আ:) ৫ম হিজরী সালের ৫ জুমাদাল উলা মদীনায় জন্মগ্রহণ করেন । তিনি ছিলেন ইমাম হুসাইনের (আ:) মহান কিয়াম ও বিপ্লবের বার্তা বাহিকা । কারবালায় ইমাম হুসাইনের ( আর:) শাহাদাতের বাণী ও শিক্ষা এবং কিয়ামের ইতিহাস কারবালার মরু প্রান্তরেই ঢাকা ও চাপা পড়ে যেত যদি ইমাম ময়নুল আবেদীন ( আ:), হযরত যয়নাব (আ:) এবং আহলুল বাইতের অন্য সকল বন্দী নারী ও শিশু শহীদ ইমাম হুসাইন এবং তাঁর শহীদ সংগী সাথীদের মযলূমিয়াত , তাঁদের কিয়াম ও বিপ্লবের শ্বাশত বাণী জনসমক্ষে পৌঁছে না দিতেন ।
বিশেষ করে হযরত যয়নাব (আ:) কারবালা থেকে কূফায় , কূফা নগরীতে , পাপিষ্ঠ নরাধম ইবনে যিয়াদের দরবারে , কূফা থেকে শামের দামেস্কে যাওয়ার পথে , দামেস্ক নগরীতে এবং পাপিষ্ঠ ইয়াযীদ ইবনে মুয়াবিয়ার দরবারে নির্ভীক চিত্তে ইয়াযীদ , ইবনে যিয়াদ ও বনী উমাইয়ার বিচ্যুতি , অন্যায় এবং ইমাম হুসাইন ( আ:)এর মযলূমিয়াত ও শাহাদাৎ এবং মহানবীর (সা:) আহলুল বাইতের (আ:) উপর ইয়াযীদ , ইবনে যিয়াদ এবং তাদের সাঙ্গপাঙ্গ দের অত্যাচারের কথা অত্যন্ত বলিষ্ঠ ও স্পষ্ট ভাষায় ব্যক্ত করেছিলেন ।
তাঁর এ স্পষ্ট ভাষণে ইয়াযীদ , ইবনে যিয়াদ ও বনী উমাইয়া সম্পূর্ণ অপদস্থ এবং মযলূম শহীদ ইমাম হুসাইন (আ:) ও আহলুল বাইত ( আ:) - এর ফযীলৎ ও মর্যাদা সবার সামনে প্রতিষ্ঠিত হয় । আসলে মহান আল্লাহ পাক হযরত
যয়নাবের (আ:) কণ্ঠ নিঃসৃত বাণী , বক্তব্য ও ভাষণের মাধ্যমে শহীদ ইমাম হুসাইনকে (আ:) প্রকৃত বিজয়ী ও তাঁর মর্যাদা, আদর্শ ও শিক্ষাকে প্রতিষ্ঠিত এবং তাঁর শত্রুদেরকে বিশেষ করে ইয়াযীদ , ইবনে যিয়াদ , উমর ইবনে সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস ও শিমারকে অপদস্থ করেছেন । হযরত যয়নাব ( আ:) কারবালায় অসুস্থ ইমাম আলী ইবনুল হুসাইন (আ:)
এর সার্বিক সেবা শুশ্রূষা এবং তাঁকে ইয়াযীদ ও ইবনে যিয়াদের লোকদের এবং শিমার ও উমর ইবনে সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাসের অনিষ্ঠ সাধন ও প্রাণনাশের চেষ্টা থেকে রক্ষা করেছেন । হযরত যয়নাব (আ:) -এর অসাধারণ প্রজ্ঞা , জ্ঞান , বুদ্ধিমত্তার জন্য তাঁকে আকীলাতু বনী হাশিম ( বনী হাশিমের জ্ঞানী বুদ্ধিমতি নারী )ও আলিমাতুন গাইর মুআল্লামাহ্ ( এমন বিদুষী নারী যিনি কোনো শিক্ষকের কাছে শিক্ষা গ্রহণ করেন নি অর্থাৎ তাঁর জ্ঞান ছিল ইলহাম্ প্রসূত এবং মহানবী (সা:) , হযরত আলী (আ:) , হযরত ফাতিমা (আ:) , ইমাম হাসান (আ:) ও ইমাম হুসাইন (আ:) অর্থাৎ আহলুল বাইত (আ:) থেকে প্রাপ্ত ও অর্জিত এবং হযরত যয়নাবের (আ:) জ্ঞান পবিত্র কুরআন ও মহানবী (সা:) ও আহলুল বাইতের (আ:) সুন্নাহ ও সীরাত সংক্রান্ত গভীর চিন্তা ও অনুধাবন ( তা'আক্কুল) প্রসূত
। আর এ কারণে তাঁর শিক্ষক ছিলেন স্বয়ং আল্লাহ পাক এবং এ কারণেই হযরত যয়নাব (আ:) কোনো শিক্ষকের কাছে শিক্ষা নেন নি ।)। হযরত যয়নাব (আ:) কে ফাহীমাহ ( ফাহীমাতুন গাইর মুফাহ্হমাহ : এমন সমঝ ও বুঝ শক্তির অধিকারিণী যাঁকে মহান আল্লাহ , মহানবী (সা:) ও তাঁর আহলুল বাইত (আ:)ই কেবল শিখিয়েছেন তাঁকে এ জন্য অন্য কোনো শিক্ষকের কাছে শিক্ষা করতে হয় নি ) , ফাযেলাহ ( জ্ঞানী বিদূষী ও গুণবতী ) ও আবিদা ( ইবাদত কারিণী ) বলা হত ।
হযরত যয়নাব ( আ:) মহানবী (সা:), হযরত ফাতিমা (আ:) , তিন নিষ্পাপ ইমাম : হযরত ইমাম আলী (আ:) , ইমাম হাসান (আ:) ও ইমাম হুসাইনের (আ:) এর তত্ত্বাবধানে প্রতিপালিত হয়েছিলেন বিধায় কারবালায় ইমাম হুসাইনের (আ:) শাহাদাতের পর আহলুল বাইতের (আ:) বন্দী নারী ও শিশুদের তত্ত্বাবধান করেছেন এবং "মহান আল্লাহ তোমার ভাইয়ের ( হুসাইন ) সাথে যে আচরণ করেছেন সে সম্পর্কে তোমার কী অভিমত ? -- ইবনে যিয়াদের টিটকারি ও ধৃষ্টতাপূর্ণ এ উক্তির জবাবে বলেছিলেন দ্ব্যর্থহীন ভাষায় , পূর্ণ আত্মবিশ্বাস ও প্রত্যয় নিয়ে হযরত যয়নাব (আ:) যথার্থই বলেছিলেন : আর আমি সুন্দর ছাড়া আর কিছুই প্রত্যক্ষ করি নি । এরা হচ্ছে এমন সম্প্রদায় (কওম) যাদের জন্য মহান আল্লাহ পাক শাহাদাৎ নির্ধারিত করেছিলেন । অত:পর তাঁরা তাঁদের শাহাদাতের স্থানের দিকেই ধাবিত হয়েছেন (ও তাঁদের চিরস্থায়ী বাসস্থানের দিকে গমন করেছেন) ।
وَ مَا رَأَيْتُ إِلَّا جَمِيْلَاً هَٰؤُلَاءِ قَوْمٌ کَتَبَ اللّٰهُ عَلَیْهِمُ الْقَتْلَ فَبَرَزُوْا إِلَی مَضَاجِعِهِمْ.
ইমাম হুসাইন ( আ :) ও তাঁর সঙ্গী সাথীদের শাহাদাৎ এবং মহানবীর (সা:) আহলুল বাইতের (আ :) নারী ও শিশুদের বন্দীদশা ( ইসারত ) ও মযলূমীয়াত( مظلومیت ) এসব কিছু যেহেতু মহান আল্লাহর দ্বীন রক্ষার্থে হয়েছে সেহেতু এ সব কিছুই হযরত যয়নাবের দৃষ্টিতে সুন্দর ( জামীল) বলে প্রতিভাত হয়েছে । কারণ হযরত যয়নাব (আ:) ছিলেন মহান আল্লাহ , পরকাল ও কিয়ামত দিবসে পূর্ণ ঈমানের অধিকারী ।
নি: সন্দেহে হযরত যয়নাব (আ:) ছিলেন সংগ্রামী বিপ্লবী নারী । তিনি ( আ.) ছিলেন কারবালায় আশুরার হুসাইনী বিপ্লবের বার্তাবাহিকা। নিজ জীবন প্রাণ দিয়ে তিনি এ মহান ঐশ্বরিক বিপ্লবের আদর্শ ও আহলুল বাইতের(আ:) ইমামতের ধারা রক্ষায় নিজের সব কিছু উৎসর্গ করেছেন। তিনি ( আ .) নারী পুরুষ নির্বিশেষে সকল মুমিন ও মুসলমানের বরেণ্য আদর্শ।
আমাদের নারী ও মহিলা সমাজের উচিৎ তাঁর আদর্শের পূর্ণ অনুসরণ । হযরত যয়নাব ( আ.)
কারবালায় ইমাম হুসাইনের ( আ .) শাহাদাতের পর অসুস্থ্য ইমাম আলী ইবনুল হুসাইন যাইনুল আবেদীনের ( আ.) সেবাশুশ্রূষা এবং আহলুল বাইতের ( আ.) অসহায় নারী ও ইয়াতীম শিশুদের সার্বিক তত্ত্বাবধান করেছিলেন বিধায় এ দিবসটি ( হযরত যয়নাবের শুভ জন্মদিন ৫ জুমাদাল উলা ) ইরানে জাতীয় নার্স ডে ( নার্স অর্থাৎ সেবিকা দিবস ) হিসেবে পালন এবং যে সব নার্স নার্সিং অর্থাৎ রোগীর সেবা শুশ্রুষায় অবদান ও অগ্রণী ভূমিকা রেখেছেন তাদের সম্মান ও সম্মর্ধনা ( তাজলীল ) প্রদান করা হয় ।
হযরত যয়নাবের (আ.) শুভ জন্মদিন এবং নার্স ডে উপলক্ষে সকল মুসলিম উম্মাহ ও বিশেষ করে নার্স অর্থাৎ রোগীদের সেবক সেবিকাদের জানাই আন্তরিক অভিনন্দন , শুভেচ্ছা ও তাবরীক ( মুবারক বাদ ) । মহান আল্লাহ আমাদের সবাইকে হযরত যয়নাব বিনতে আলী ইবনে আবী তালিবের ( আ. ) ত্যাগ ও সেবার আদর্শ অনুসরণের তৌফীক দিন ।
(মুহাম্মদ মুনীর হুসাইন খান। ৫ জুমাদাল উলা ১৪৪৩ হি. ( ১৯ - ৯ -২০২১ )